ঘরে বসে অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার সহজ উপায় ২০২৪
বর্তমান সময়ে পাসপোর্ট অতীব জরুরী একটি বিষয়। কিন্তু এই বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকার থাকার কারণে অনেকেই পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়আপনি কি এই ভোগান্তি এড়িয়ে ঘরে বসে অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম গুলো জানতে চান তাহলে আর দেরি কিসের আজকের এই ব্লকটি আপনার জন্যই অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়ম গুলো জানতে পুরো ব্লগটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল ।
ভূমিকা
পাসপোর্ট নিজের পরিচিতি বহনকারী একটি সরকারি কাগজ যা আপনি কোন দেশের বৈধ নাগরিক তার পরিচয় বহন করে । নিজ দেশ থেকে বাহিরে অন্য যেকোন দেশে যাওয়ার জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি পেপার যা যেকোনো বয়সের নাগরিকের জন্য থাকা প্রয়োজন। এই পাসপোর্ট যে কোন ব্যক্তি ঘরে বসে খুব সহজে অনলাইনে আবেদন করতে পারে ।
পাসপোর্ট কি
পাসপোর্ট হল কোন নির্দিষ্ট একটি দেশের সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত ভ্রমণ কাগজ । যে কাগজ ওই ব্যক্তির সমস্ত তথ্য ও উপাত্ত নিবন্ধিত করে । নিবন্ধিত ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ তথ্য যেমন নাম, বাবার নাম , মায়ের নাম ,জন্মস্থান ঠিকানা ও ছবি উল্লেখ করা থাকে । সর্বপ্রথম জাপান ১৮৬৬ সালে প্রথম পাসপোর্ট চালু করে বাংলাদেশে প্রথম অবস্থায় যে পাসপোর্ট পাওয়া যেত ।
সেটা হলো হাতে লেখা পাসপোর্ট পরবর্তীতে এমআরপি পাসপোর্ট চালু হয় বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্রই পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু আছে। এই ই পাসপোর্টে ব্যক্তির থ্রি ডাইমেনশন ছবি ,দশ আঙ্গুলের ছাপ , চোখের আইরিশ ও ডিজিটাল সিগনেচার করা থাকে । বর্তমানে খুব সহজে অনলাইনে কারো সাহায্য ছাড়াই আপনি ঘরে বসে এই ই পাসপোর্ট এর আবেদন করতে পারবেন।
পাসপোর্ট কত প্রকার ও কি কি
একটি ইলেকট্রনিক চিপের মধ্যে পাসপোর্ট এর ব্যক্তিগত সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে । পাসপোর্ট থাকার ফলে একজন ব্যক্তি খুব দ্রুতই ইমিগ্রেশন এর ঝামেলা এড়িয়ে বাইরের যে কোন দেশে ভ্রমণ করতে পারে । বর্তমানে পাসপোর্ট ডিজিটাল হওয়ায় ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া আরো খুব সহজ হয়ে গেছে ।
বর্তমান ই পাসপোর্টে অত্যাধুনিক ফিচার ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে । যার ফলে নিমিষেই কোন ব্যক্তির তথ্য জানা যায় । তবে এই পাসপোর্ট মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে ।
- কূটনৈতিক পাসপোর্ট যার রং লাল কালারের
- সরকারি পাসপোর্ট যার রং নীল কালারের ও
- সাধারণ পাসপোর্ট সবুজ কালারের হয়ে থাকে
ই পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বাংলাদেশে ই পাসপোর্ট আসার আগে এমআরপি পাসপোর্ট চালু ছিল । এমআরপি পাসপোর্টে ফ্রম হাতে লিখে পূরণ করতে হতো ।এবং চেয়ারম্যান কমিশনার অথবা প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার স্বাক্ষর প্রয়োজন ছিল । কিন্তু ই পাসপোর্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে এগুলোর কোন প্রয়োজন নেই ।
আপনার কাছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট অথবা ল্যাপটএপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার থাকলেই ,আপনি নিজেই নেট ব্রাউজিং এর মাধ্যমে ফর্ম ফিলাপ করতে পারবেন ।তার সাথে বাসায় বসেই মোবাইল ব্যাংকিং বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ই পাসপোর্ট এর অর্থ জমা করে ,খুব দ্রুততম সময়ে নিকটতম জেলা পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ই পাসপোর্ট এর কার্য সম্পাদন করতে পারবেন।
কাগজ গুলো নিম্নরূপ ,
- স্মার্ট এন আই ডি কালার ফটোকপি অথবা এন আই ডি ফটোকপি তার সাথে নির্বাচন অফিস থেকে ভেরিফাইড কপি জমা দিতে হবে ১৮ বছরের উর্ধ্বে থেকে
- জন্ম নিবন্ধন এর বাংলা ও ইংরেজি ফটোকপি ও তার সাথে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এর ওয়েবসাইট থেকে জন্ম নিবন্ধনের ভেরিফাইড কপি ১৮ বছরের নিচের ক্ষেত্রে
- বাবা-মা এর এন আই ডির ফটোকপি [ মারা গেলে প্রয়োজন নেই]
- ই পাসপোর্ট পোর্টালে আবেদনকৃত সামারি কপি প্রিন্টেড
- ই পাসপোর্ট পোর্টালে আবেদন ফরম প্রিন্টেড
- এ চালানোর মাধ্যমে অর্থ জমা দেওয়ার রশিদ
- চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিকত্ব সনদ এর অরিজিনাল কপি
- স্থায়ী ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য বিদ্যুৎ পানি অথবা টেলিফোন বিলের ফটোকপি
- পেশা প্রমাণের ক্ষেত্রে পেশার কাগজপত্র এর ফটোকপি
পাসপোর্ট রিনিউ এর ক্ষেত্রে অবশ্যই এই কাগজগুলোর সাথে পূর্বের পাসপোর্ট এর তথ্য পেজের ফটোকপি এবং অরিজিনাল টা সাথে আনবেন ।
পাসপোর্ট যদি হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে জিডি করবেন এবং জিডির ফটোকপি জমা দিবেন ও অরিজিনাল কপিও সাথে রাখবেন ।
ই পাসপোর্ট পূরণ করার পরে অফলাইনের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে যে কাগজপত্র গুলো ফটোকপি জমা দিবেন অবশ্যই এর অরিজিনাল কপিগুলো সাথে রাখবেন।
এই সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজগুলো সাথে নিয়ে অফিসে জমা দিয়ে দিতে হবে । এবং কয়েক কার্য দিবসের মধ্যে আমাদের পাসপোর্ট এর মূল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে আমরা আমাদের পাসপোর্ট কপিটি হাতে পেয়ে যাব ।
পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া
অনেকেই আছে পাসপোর্ট সম্পর্কে ধারণা কম , কিভাবে করবে কার কাছে যাবে এরকম বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন ।আশা করি যে প্রক্রিয়াটি আপনাকে বলে দেওয়া হবে এই প্রক্রিয়ায় আপনি খুব সহজেই ও অল্প সময়ে পাসপোর্ট হাতে পাবেন ইনশাআল্লাহ। চলুন প্রক্রিয়া গুলো জেনে নেওয়া যাক ।
আপনি যদি নিজেই পাসপোর্ট করতে চান ,তবে প্রথমে আপনাকে আপনার এনআইডি কার্ড যদি ১৮ বছর না হয়ে থাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধনের কপি , তারপরে বাবা-মায়ের এনআইডি কার্ড ,বাড়ির বিদ্যুৎ পানি ,গ্যাস ,অথবা টেলিফোন বিলের ফটোকপি ,পেশা প্রমাণের জন্য সনদপত্র ছাত্র হলে ছাত্র আইডি কার্ড ও চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিকত্ব সনদপত্র দুই কপি , এই কাগজগুলো সংগ্রহ করবেন ।
এরপর আপনার অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অথবা ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ এ ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে অনলাইন ই পাসপোর্ট পোর্টালে যে প্রথমে নিজের মেইল আইডি দিয়ে সাইন ইন করে নিবেন। এরপর তথ্য আসবে তথ্য পেজে প্রথমে নিজের তথ্য তারপর বাবা-মায়ের তথ্য তারপর বিবাহিত হলে সেই তথ্য অবিবাহিত হলে দরকার নেই পেশার তথ্য সবকিছু দিয়ে তথ্য আপলোড করবেন ।
আপলোড করা হয়ে গেলে পুরো ফর্মটা আপনার সামনে আসবে যদি কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে , এডিট অপশন থেকে সঠিক করে নিবেন । এবার নিচে একটা ঘরে টিক চিহ্ন দিয়ে সব তথ্য আপলোড করবেন ।তখন একটা সামারি ফর্ম আসবে ওটা সেভ করে নিবেন ।অথবা প্রিন্ট আউট করে নিবেন ।এবার নিচে ডাউনলোড ফ্রম আসবে ওখান থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট আউট করে নিবেন ।
ইপাসপোর্ট পোর্টালে পাসপোর্ট ফিস একটি অপশন আছে ওই অপশনে ক্লিক করে অফলাইনে পেমেন্ট সিস্টেম ক্লিক করবেন। অফলাইনে ক্লিক করার পরে এ চালান এর একটি ফর্ম আসবে ওই ফর্মে যাবতীয় তথ্য আপলোড করে মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ রকেট নগদ ইউপে অথবা যেকোনো ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনার ই পাসপোর্ট এর ফিস জমা দিতে পারবেন ।
জমা হয়ে গেলে একটি জমা চালান ফরম আসবে ওটা প্রিন্ট আউট করে নিতে হবে প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি ই পাসপোর্ট তিন প্রকারের হয়ে থাকে সাধারণত সাধারণ ইপাসপোর্ট এর যে নিয়ম এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তবে কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্ট নিয়ম একটু আলাদা। এই সাধারণ ইপাসপোর্ট তিন দিন দশ দিন ২১ দিন এই তিন সময়ের মধ্যে আপনি হাতে পেতে পারেন ।
পাসপোর্ট আবেদন ফি
অনলাইন আবেদনের সময় পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে হয় ।ছাড়াও অনলাইন ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক এর মাধ্যমে আবেদন ফি জমা দেয়া যায় ।যেমন ঢাকা ব্যাংক ওয়ান ব্যাংক সোনালী ব্যাংক এশিয়া ব্যাংক এর মাধ্যমেও টাকা আপনি জমা দিতে পারবেন ।পাসপোর্ট এর ধরনের উপর ভিত্তি করে টাকার পরিমাণও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে যেমন ৪৮ পেজ ও ৬৪ পেজ এবং এর মেয়াদের ওপর ও সময়ের ওপর পাসপোর্ট আবেদনের ফি নির্ধারিত হয়ে থাকে ।
শেষ কথা
ই পাসপোর্ট বর্তমান সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পেপার যা আপনার দেশের বাহিরে যেতে হলে অবশ্যই প্রয়োজন ওমরা হজ চিকিৎসা বিভিন্ন দেশ এর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ঘুরতে যাওয়া এইসব ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয় তাই সবারই ই পাসপোর্ট করে রাখা উচিত। ওয়েবসাইটের এই ব্লকটিতে আপনি পড়ে নিজে নিজেই ইপাসপোর্ট করতে পারবেন ওয়েবসাইটের এই ব্লগটি পড়ে যদি কোন উপকার পেয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে পারেন ধন্যবাদ ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url