সারোগেসি কি ও সারোগেসি পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন


আজকাল সারোগেসি শব্দটা অনেকের কাছেই পরিচিত ।কিন্তু সারোগেসি জিনিসটা কি ও সারোগেসি পদ্ধতি কিভাবে করে এটা নিয়েও অনেকের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। চিন্তার কোন কারণ নেই সারোগেসি কি ও সারোগেসি পদ্ধতি নিয়ে আজকে আমাদের এই ব্লগে আলোচনা করব ।

ভূমিকা

সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত স্বরূপ । বিবাহের পর সব দম্পতি চাই তাদের নিজেদের সন্তান হোক । তাদের ঘর আলো করে বাচ্চারা খেলে বেড়াবে । তবে অনেক দম্পতিরই শারীরিক কিছু সমস্যা ও জটিলতার কারণে সন্তান কন্সিভ করতে পারে না । যার ফলে তাদেরকে অন্য উপায়ে সন্তান গ্রহণ করতে হয় । কৃত্রিমভাবে সন্তান জন্মদানেরই অন্যতম একটি পদ্ধতি হচ্ছে সারোগেসি ।

সারোগেসি শব্দের অর্থ

সারোগেসি শব্দের অর্থ হলো গর্ভাশয় ভাড়া ।একজন দম্পতি যারা তাদের প্রাকৃতিক নিয়মে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম তারা সাধারণত এই সারগেসি পদ্ধতি অনুসরণ করে সন্তান জন্ম দিতে পারে ।একজন নারীর গর্ভে অন্য একটি দম্পতির সন্তান ধারণের প্রক্রিয়াকে সারোগেসি বলা হয় ।

 এই পদ্ধতিতে পুরুষের শরীরের শুক্রাণু ও স্ত্রীর শরীরে থাকা ডিম্বাণু ইন ভিট্রফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে দেহের বাইরে টেস্ট টিউবে নিষিক্ত করে তা অন্য একটি নারীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয় । মাধ্যমে নিঃসন্দান দম্পতিরাও মাতৃত্বের সাধ নিতে পারে । সারোগেসি পদ্ধতিটি অবশ্যই একটি আইনি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে ।

সারোগেসির প্রকারভেদ

সাধারণত গর্ভধারণের অক্ষম নারীরা সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে . এই সারোগেসি দুইটা পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়
  • প্রথাগত বা সনাতন পদ্ধতি
  • আধুনিক পদ্ধতি
সনাতন পদ্ধতি   এই পদ্ধতিতে তার গেটের ডিম্বাণু যৌন মিলনের মাধ্যমে পিতার শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত করা হয় । তারপর স্যারোগেট মায়ের গর্ভাশয় প্রবেশ করিয়ে গর্ভধারণ করানো হয় এই পদ্ধতিতে সন্তান মায়ের গর্ভেই বড় হতে থাকে । এই পদ্ধতিতে তুলনামূলক খরচ কম এবং জটিলতাও কম । তবে এই পদ্ধতিতে পরবর্তীতে কিছু আইনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে কারণ গর্ভধাত্রী মা একই সঙ্গে বায়োলজিক্যাল মা ও হন সুতরাং পরবর্তীতে কিছু সামাজিক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে মায়েদের মধ্যে সন্তান কে নিয়ে ।

আধুনিক পদ্ধতি এই পদ্ধতিটি বর্তমানে বেশি প্রচলিত এবং ব্যয়বহুল ও বটে । এই পদ্ধতিতে আইভিএফ( ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিম্বাণুকে সরাসরি করার পর প্রতিস্থাপন করা হয় । টেস্ট টিউব বা ল্যাবরেটরির মাধ্যমে হবু বাবা-মার ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করে করার নিষিক্ত করণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় ।এই প্রক্রিয়াতে গর্ভধারি মা বায়োলজিকালি মা হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবেন না । তিনি শুধু একজন জন্মদাত্রী মা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন ।বলিউড টলিউড এর বড় বড় নায়ক নায়িকারা এই পদ্ধতির মাধ্যমে নিজেদের সন্তানকে জন্ম দিয়ে থাকেন ।

সারোগেসি পদ্ধতি

যে সকল মায়েরা স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম হয়ে থাকেন তারা তারকেশের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে পারেন । এই সারোগেসি কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে ।
.প্রথমে সন্তান ধারণ করতে অক্ষম এই জাতীয় একটি আবেদনপত্র জোগাড় করে সারোগেসির জন্য আবেদন করতে হয় ।

সারোগেট মা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ কিনা সে সকল পরীক্ষা করতে হয়
এইচআইভি চিকেন পক্স হেপাটাইটিস বি এই জাতীয় কোন অসুখ টার্গেট মায়ের আছে কিনা তা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিতে হয় ।আইনি চুক্তিপত্র প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে নিতে হয় ।এ সন্তান জন্মের পর সম্পূর্ণ দায়িত্ব পাবে তার মা বাবা ।

এরপর যে দম্পতি বাবা-মা হতে চাচ্ছেন তাদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু আইভিএফ কৌশলের মাধ্যমে সারোগেট নারীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয় । এবং সেখান থেকে ভ্রুণ তৈরি হয় । এবং গ্রহণটিকে একটি কাচের ভেতরে রাখা হয় ।এক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটাকে টেস্টটিউব পদ্ধতি বলে থাকে । এবং জন্মদানের পর অনেক ক্ষেত্রে এটিকে টেস্টটিউব বেবি ও বলা হয়ে থাকে ।

 এই সমস্ত প্রক্রিয়াটি একটি টেস্ট টিউবের মাধ্যমে ল্যাবে সম্পন্ন করা হয় । পুরুষের শুক্রাণু গ্রহণের পর নারীর শরীরের মধ্যে থেকে ডিম্বাণু বের করে একটি সুচের মাধ্যমে শুক্রাণুতে প্রবেশ করানো হয় । এবং একটি মেডিকেল টিউবের মাধ্যমে সারোগেসি নারীর জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়।এবং কাঁচের মধ্যে প্রস্তুতকৃত ভ্রুণটি সার্কেট নারীর গর্ভে প্রবেশ করানো হয় । এই পুরো প্রক্রিয়াটিকেই সারোগেসি পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে ।

সারোগেসি কাদের জন্য

আজকাল অনেক মেয়েই অনিয়মিত পিরিওড এর সমস্যায় ভুগেন । দিন দিন খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল, সুস্থ পরিবেশ ও সুস্থ মানসিকতার অভাবে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের অসুখ ও জটিলতায় ভুগে থাকেন । অনেক মহিলা সুস্থ থাকার পরেও বারবার গর্ভপাত জনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন । অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জরায়ু ক্যান্সার এর আক্রান্তের হার দিন দিন বাড়ছে 

ফলে গর্ভধারণের সক্ষমতা মহিলাদের মধ্যে কমে আসছে । অনেক দম্পতি বছরের পর বছর ডাক্তার দেখিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসা করেও একটি সন্তানের মুখ দেখতে পারেন না । মূলত সেই সকল দম্পতি এই সারগেসির মাধ্যমে বাবা-মা হতে পারেন। তবে অবশ্যই দম্পতিকে সন্তান ধারণের অক্ষম সংক্রান্ত সার্টিফিকেট জমা দিয়ে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে ।

 যে কোন দম্পতি চাইলেই সারোগেসি করতে পারবেন না । যদি একটি সন্তান থাকে এবং দ্বিতীয় সন্তান ধারণের অক্ষম হয়ে থাকেন তাহলেও এ জাতীয় দম্পতিদের মাধ্যমে সন্তান নিতে পারবেন না । সম্প্রতি অনেক ফেমাস নায়ক ও নায়িকাদের আমরা এই পদ্ধতির মাধ্যমে বাবা ও মা হতে দেখেছি । যেমন বিখ্যাত নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও নিক জোনাক দম্পতি এই সারগরেসির মাধ্যমে তাদের সন্তান জন্ম দিয়েছেন । 

সারোগেট মা কে হতে পারবেন

এই প্রক্রিয়াটি একটি আইনি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে । সুতরাং চাইলেই যে কেউই টার্গেট মা হতে পারবেন না। তাকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে তবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে । নতুন আইন অনুযায়ী টার্গেট মা হওয়ার জন্য অবশ্যই দম্পতির নিকট আত্মীয় হতে হবে । এবং শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে সুস্থতার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।

 সারোগেটমা একবার হওয়া যাবে । দম্পতির আত্মীয় ছাড়া অন্য কেউ তারও কিসের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। তবে অনেকেই ইলিগ্যাল অনুযায়ী আত্মীয় সেজে টাকার লোভে সারোগেসি প্রক্রিয়া করে যা একেবারে আইন অনুযায়ী অবৈধ।

সারোগেসিতে খরচ কত

সারোগেসির পুরো প্রক্রিয়াটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতার মাধ্যম দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সারোগেট মায়ের অনেক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচটা একটু বেশি পড়ে যায় । ভারতে আইভিএফ পদ্ধতির আনুমানিক ৬০ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে । এছাড়াও সারোসের মাধ্যমে সন্তান পেতে অনেক ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দম্পতিকে খরচ করা লাগতে পারে । এবং গর্ভ পরবর্তী চিকিৎসা সেবা খরচ । 

শেষ কথা  

একটি সন্তান পাওয়ার জন্য একজন দম্পতি আকুল হয়ে থাকে। তাদের জন্য এই সারোগেসি পদ্ধতিটা হতে পারে সন্তান পাওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে বেশ জটিলতা দেখা দিতে পারে । আমি আমার আজকের ব্লগে এই বিষয়গুলো আলোচনা করেছি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পুরো বিষয়টি শেয়ার করবেন আপনার বন্ধুদের সাথে ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url