মাশরুম কি ও মাশরুমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আমাদের খাদ্য তালিকার জন্য মাশরুম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান । কিন্তু আমরা অনেকেই
এই মাশরুমের গুনাগুন সম্পর্কে জানিনা। মাশরুম কি জিনিস সেটাও হয়তো অনেকেই আমরা
জানি না । মাশরুম কি ও মাশরুমের পুষ্টিগণ সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা
করব । পুষ্টিকর অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন ভিটামিন মিনারেল প্রোটিন এ জাতীয়
উপাদান গুলো মাশরুমের মধ্যে বিদ্যমান থাকে ।
যা আমাদের শরীরের গঠনের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় । মাশরুম অনেক ভাবেই খাওয়া যায় । মূলত এটি রান্না করে বা সালাদ হিসেবে বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। মাশরুমে ক্ষতিকর ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট না থাকায় এটি খেলে আমাদের শরীরে কোন ক্ষতি করতে হয় না । অপরদিকে মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় মাশরুম খওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি ।
যা আমাদের শরীরের গঠনের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় । মাশরুম অনেক ভাবেই খাওয়া যায় । মূলত এটি রান্না করে বা সালাদ হিসেবে বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। মাশরুমে ক্ষতিকর ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট না থাকায় এটি খেলে আমাদের শরীরে কোন ক্ষতি করতে হয় না । অপরদিকে মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় মাশরুম খওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি ।
ভূমিকা
মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতা হিসাবে বেশি পরিচিত হওয়ায় অনেকেই এই মাশরুম খেতে অপছন্দ করে । কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ জানে না এই মাশরুমের মধ্যে কি ধরনের পুষ্টি গুনাগুন লুকিয়ে আছে । তবে শহরের মানুষ মাশরুম এর গুনাগুন সম্পর্কে অনেক জানলেও।
গ্রামে এখনো মাশরুমের গুনাগুন সম্পর্কে ধারণা তেমন নেই বললেই চলে । তবে
যেখানে সেখানে বেড়ে ওঠা মাশরুম না খাওয়াই ভালো । নিজে চাষ করা কিংবা অর্গানিক
পদ্ধতিতে চাষ করা মাশরুম বেশি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়ে থাকে।
মাশরুম কি
মাশরুম হল অত্যন্ত জনপ্রিয় পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি খাবার । মাশরুমের বাংলা
অর্থ হচ্ছে ব্যাঙের ছাতা। মাশরুম এর বৈজ্ঞানিক নাম - Agaricus bisporus.
মাশরুম পরজীবী সমাঙ্গ দেহি ক্লোরোফিল বিহীন এক প্রকারের ছত্রাক । বিভিন্ন পচা
গোবর কিংবা কাঠের গুড়ির ওপরে এরা জন্মায় । ছত্রাকের বেশিরভাগ বেসি ডিও
মাইক্রোটা ও এসকোমাইকটা পর্বের অন্তর্ভুক্ত । এরা মৃতজীবী উদ্ভিদ । এরা ক্লোরোফিল
না থাকাই নিজেরা নিজেদের খাবার তৈরি করতে পারে না ।
মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ,মিনারে্ল , ফাইবার থাকায় এটি আমাদের
শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী । এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজারের মতো মাশরুম পাওয়া
গেছে । তবে বাড়ির আশেপাশে কিংবা জঙ্গলে যে সমস্ত মাশরুম সহজেই বেড়ে ওঠে সেগুলো
মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয় সেগুলো হতে পারে বিষাক্ত যা খেলে আমাদের শরীরে অনেক
ক্ষতি হতে পারে । তাই অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা মাশরুমে খাওয়া আমাদের জন্য
স্বাস্থ্যসম্মত ।
মাশরুমের পুষ্টিগুণ
মাশরুম উপকারী ও পুষ্টিকর একটি খাবার। অতিরিক্ত মাংস খেলে আমাদের শরীরে যে
ক্ষতিগুলো হতে পারে মাশরুম খেলে আমরা সেই ক্ষতির ঝুঁকি থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকতে
পারি । তবে আমরা অনেকেই মাশরুমের পুষ্টিগুণ নিয়ে মোটেও সচেতন নই । আমাদের মধ্যে
তো অনেকেই জানেনা মাশরুম কতটুকু পুষ্টিকর ।
উপাদান | পরিমান |
---|---|
প্রোটিন | ২৫-৩৫ গ্রাম |
ভিটামিন | ৫৭-৬০ গ্রাম |
মিনারেল | ৫-৬ গ্রাম |
চর্বি | ৪-৬ গ্রাম |
ফাইবার | ১০-২৮ গ্রাম |
কোলেস্টেরল | ০ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৩ গ্রাম |
শর্করা | ৩ গ্রাম |
পটাশিয়াম | ৩১৮ গ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৯ গ্রাম |
সোডিয়াম | ৫ গ্রাম |
মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন মিনারেলস ফাইবার এবং আরো অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের শরীর গঠনের জন্য অনেক উপকারী ।
আমাদের খাবারের পুষ্টি তালিকায় অবশ্যই মাশরুম রাখা উচিত । বিভিন্ন ধরনের রোগ
প্রতিরোধ করে থাকে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে থাকে। সুস্থ থাকার জন্য আমাদের শরীরের যে সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান
দরকার, এর বেশিরভাগই মাশরুম মধ্যে বিদ্যমান থাকায় মাশরুমের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি
।
মাশরুমের উপকারিতা
মাশরুম অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু একটি খাবার অনেক বেশি । মাশরুমের মধ্যে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম থাকায় আমাদের শরীরের জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান । সুস্থ থাকার জন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই
মাশরুম রাখা উচিত । এছাড়াও মাশরুমের উপকারিতা অনেক বেশি । যেমন ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: উচ্চ রক্তচাপ হয় না বর্তমানে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া আসলেই মুশকিল। মাশরুম মধ্যে
এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে
সাহায্য করে। হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই মাশরুম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন ।
মাশরুমে রয়েছে এরিটাডেনিন, লোভাস্টিন, এন্টাডেনিন যা আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল ও
রক্তচাপের মাত্রা ঠিক রাখে
হাড মজবুত রাখেঃ মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম । আর আমরা সবাই জানি ক্যালসিয়াম হাড়
গঠনে ও হাড়কে মজবুত রাখতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান ।হাড়জোড়া হাড়ের
বিভিন্ন ব্যথা সারাতে মাশরুমের ভূমিকা অনেক বেশি ।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃমাশরুম এমন একটি সবজি যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল । মাশরুমে
বিদ্যমান ফাইবার আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।
ওজন কমাতেঃ মাশরুমে কোন প্রকারের ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় উপাদান থাকে না । তাই আমরা ওজন
নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আমাদের ডায়েট চাটে মাশরুমকে রাখতে পারি ।
ত্বক সুস্থ রাখতেঃ ত্বককে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের ত্বকে পরিমাণ মতো পানি ও ভিটামিন থাকা খুবই জরুরী
। আর আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমানের পানি ও ভিটামিন
।তাই নিয়মিত মাশরুম খেলে আমাদের ত্বক নরম কোমল ও সুস্থ থাকতে পারে ।
রক্তশূন্যতা দূর করেঃ অ্যানিমিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য মাশরুম হতে পারে একটি অন্যতম খাদ্য উপাদান ।
সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন মাশরুম খেলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হওয়ার
প্রবণতা অনেকটাই কমে যায় ।
এছাড়াও মাশরুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে । যেমন মাশরুম শিশুদের দাঁত ও হাড়কে
সুস্থ রাখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের হাইপারটেনশন দূর করে । তাছাড়াও
মাশরুমে রয়েছে পানীয় খনিজ লবণ যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা পালন
করে ।
মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার হলেও অনেকেই এই খাবারটা সঠিকভাবে খেতে পারে
না । গ্রামাঞ্চলে আশেপাশে অনেক জায়গাতেই মাশরুম হতে দেখা যায় ।তবে বাড়ির
আনাচে-কানাচে বেড়ে ওঠা মাশরুম কখনোই খাওয়া উচিত না ।কারণ এতে পুষ্টির তুলনায়
ক্ষতিকর দিকগুলোই বেশি থাকে ।
এবং এই মাশরুমগুলো বিষাক্ত হয়ে থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক
ক্ষতিকর ।তাই অবশ্যই অর্গানিকভাবে চাষ করা মাশরুমগুলোই খাওয়ার উপযোগী ।মাশরুম
দিয়ে অনেক রকমের রেসিপি তৈরি করে খাওয়া যায় । যার যার পছন্দ অনুযায়ী মাশরুম
রান্না করে থাকে ।
তবে মাশরুম দিয়ে বানানো সুপটা বেশ জনপ্রিয় ও খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু বিশেষ করে
যখন অসুস্থ থাকে শরীর দুর্বল হয়ে থাকে তখন মাশরুমের সুপটা খেলে অনেক ভালো লাগে ।
এ ছাড়া চাইনিজ খাবারের সাথে কিংবা নুডুলস কিংবা হিসেবে মাশরুম অনেকে খেয়ে থাকে
।
তবে অবশ্যই কাঁচা মাশরুম খাওয়া কখনোই উচিত না । রান্নার সময় অবশ্যই সতর্ক হয়ে
নিতে হবে মাশরুম ঠিকমতো সেদ্ধ হয়েছে কিনা । অল্প সেদ্ধ বা কাঁচা মাশরুম
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ।
মাশরুমের দাম
দিন দিন মাশরুমের জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বাড়ছে । তাই মাশরুমের দামও তুলনামূলক
একটু বেশি । তবে জায়গা ভেদে মাশরুমের দামের কিছুটা তারতম্য দেখা যাই ।মাশরুম কয়
প্রকারের হয়ে থাকে । জাত ভেদেও মাশরুমের দাম বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে । যেমন কয়
প্রকারের মাশরুমের দাম নিচে ছ আকারে দেয়া হলো
মাশরুমের অপকারিতা
মাশরুমের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি হলেও এর কিছু খারাপ গুনাগুন ও রয়েছে । বাড়ির
আনাচে-কানাচে বা জঙ্গলে যে মাশরুমগুলো বড় হয়ে ওঠে এগুলো মূলত মাশরুম না এগুলো
বন্য মাশরুম হিসেবে পরিচিত । এই মাশরুমগুলো বিষাক্ত হয়ে থাকে । তাই এই
মাশরুমগুলো খাওয়া থেকে আমাদের সবারই বিরত থাকা উচিত ।
এই মাশরুমে বন্য মাশরুমে রয়েছে নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ও
ভারিস্তরের ধাতব পদার্থ আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।ুম খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই
চাষ করা বা অর্গানিক পদ্ধতিতে তৈরি মাশরুম বেছে নেওয়ায় উত্তম অন্যথায় আমাদের
স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে ।
শেষ কথা
মাশরুম অবশ্যই একটি হালাল খাবার । এটিকে ব্যাঙের ছাতা বলে মোটেও তুচ্ছ করার কোন
অবকাশ নেই ।সুস্থ থাকতে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন খাদ্য তালিকায় মাশরুম রাখা যেতে
পারে । আমরা মাশরুমের পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা করলাম আমার এই পোস্টটি যদি আপনাদের
ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ধন্যবাদ ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url