গ্রিন টি কি? ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
অতিরিক্ত মেদ নিয়ে চিন্তিত ? কিভাবে গ্রিন টি খেয়ে ওজন কমানো যায় তা নিয়ে ভাবছেন ? ।ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম গুলো নিয়েই আমরা আজকের ব্লগে আলোচনা করব সম্পূর্ণ বিষয়গুলো জানতে পুরো ব্লগটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো ।
ভূমিকা
সুস্থ দেহ ও সুন্দর থাকতে কে না চায় ।আমরা সবাই চাই একটু সুন্দর হয়ে পরিপাটি হয়ে থাকতে।কিন্তু আমাদের খাদ্য অভ্যাসে কিছু অনিয়মের কারণে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত মেদ জমে যায়। আমাদের স্বাস্থ্যের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে এবং দেখতেও কিছুটা অসুন্দর লাগে ।গ্রিন টি আমাদের শরীর এর অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে । গ্রিন টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল ।গ্রিন টি এর উপকারিতা গুলো নিচে দেখুন ।
গ্রিন টি কি
গ্রিন টি হল এক ধরনের স্বাস্থ্য সম্মত বিশেষ কোমল পানীয় । গ্রিন টি বা সবুজ চা এক ধরনের ক্যামেলিয়া সিনান্সিস, উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত বিশেষ ধরনের পাতা যা স্বাভাবিক চায়ের মত বিশেষ প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়াই তৈরি করা হয় ।
এইটা বিশেষ প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া তৈরি করা হয় জন্য অন্যান্য চায়ের মত দেখতে দানাদার হয় না । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আস্ত গোটা পাতায় দেখা যায় । এইটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে খাদ্য হজম করতে এবং ওজন কমাতে গ্রিন টি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।
গ্রিন টি এর উদ্ভব চীনে শুরু হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে এইটা পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় । ওজন কমাতে গ্রিন টি খুব এ উপকারি একটি কোমল পানীয় ।
গ্রিন টি তৈরির নিয়ম
আমরা অনেকেই আমাদের মন স্বাস্থ্য রিফ্রেসিং এর জন্য গ্রিন টি পান করে থাকি । ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস অনেকেই গড়ে তুলতে চান । কিন্তু কিভাবে গ্রিন টি খেয়ে ওজন কমানো যায় অনেকেই সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই । আবার এই গ্রিন টি কিভাবে বানাতে হয় তার সঠিক নিয়মও অনেকেই জানে না ।
তাই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে গ্রিনটি বানিয়ে পান করার ফলে অনেকেই সুস্পষ্ট রেজাল্ট পায় না । অনেকেই মনে করে গ্রিন টি পান করলেই ওজন কমে যায় । আসলে এই ধারণাটি ভুল ,সঠিক নিয়ম না জেনে গ্রিন টি পান করলে বিশেষ কোনো উপকার পাওয়া যায় না ।
কয়েকটি উপায়ে গ্রিন টি বানানো যায় তবে একেক জন একেক রকম ভাবে গ্রিন টি খেতে পছন্দ করে থাকে। ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি খেতে হলে আপনাকে সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে ।দিনটি বানানোর কয়েকটি উপায় আসুন জেনে নেয়া যাক ।
প্রথমে ঠিক করে নিবেন কয়জনের জন্য চা বানাবেন। সে অনুযায়ী পাত্রে কাপ মেপে চায়ের পানি গরম করতে দিবেন। পানি গরম হয়ে গেলে কিছুক্ষণ কাজের পাত্রে রেখে সামান্য ঠান্ডা করে নেয়া জরুরি তারপর তাতে এক চামচ চা পাতা যোগ করে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন ।
চা পাতা পুরোপুরি ভিজে গেলে তারপর মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন চায়ের পাতা যেন বেশি ভিজে না যায় তাহলে চা তিতা লাগবে ,খেতে একদমই স্বাদ লাগবে না ।সাধারণত প্রতি এক কাপ পানির জন্য এক চা চামচ গ্রীন টি ব্যবহার করা হয় ।অনেকে গ্রিন টি এর সাথে মধু বা পুদিনা পাতার রস মিশিয়ে পান করতে পছন্দ করেন।
ওজন কমাতে গ্রিন টি
শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান । এই ওজন কমাতে কত কিছুই না করেন ।ডায়েট, ব্যায়া্ম , থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছুই মেইনটেইন করেন কিন্তু তারপরেও কাঙ্খিত ফলাফল পান না । অথচ গ্রিন টি ওজন কমাতে খুব দ্রুত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে । শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে গ্রিন টি ।
গ্রিন টি এর মধ্যে থাকা মেটাবলিজম আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে ।এক কাপ দুধ চা কিংবা কফির চেয়ে একটা গ্রিন টি আমাদের শরীরের জন্য বেশি উপকারী । তবে গ্রিন টি অবশ্যই চিনি ছাড়া খেতে হবে । যারা নিয়মিত ডায়েট করে যাচ্ছেন ওজন কমানোর জন্য তারা অবশ্যই আপনাদের খাদ্য তালিকায় একটা গ্রিন টি প্রতিদিন রাখার চেষ্টা করবেন ।
নিয়মিত গ্রিন টি খেলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ কোষে বেশি শর্করা জমতে পারে না ফলে আমাদের শরীরের শর্করার হার সঠিকভাবে বজায় থাকে । গ্রিন টি খাবার হজম করতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে । গ্রিন টি এর মধ্যে থাকা ক্যাফাইন শরীরে শক্তি যোগাতে ও আমাদের সাহায্য করে। তবে গ্রিন টি খেলেই হবে না অবশ্যই গ্রীন টি খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে ।
গ্রিন টি এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যাথেইয়ন থাকার ফলে আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । একটি সুন্দর ও সুস্থ দেহ পাওয়ার জন্য অবশ্যই গ্রিন টি আমাদের ডায়েট চাটে রাখা উচিত ।
গ্রিন টি এর উপকারিতা
ওজন কমাতে গ্রিন টি বিশেষ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি এর আরও কিছু বিশেষ উপকারী দিক রয়েছে ।ক্লান্ত দেহকে চাঙ্গা করতে এক চুমুক গ্রিন টি যথেষ্ট । মুহূর্তের মধ্যেই গ্রিন টি শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে তোলে ।
- শরীর সতেজ রাখে
গ্রিনটিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট ও ফ্লাবনয়েড নামক উপাদান থাকায় এটি আমাদের শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে ।
- হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়
যে উপাদান গুলো থাকে তা আমাদের ধমনীকে পরিষ্কার রাখে এবং আমাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায় । যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করে নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন ।
- অবসাদ দূর করে
গ্রিন টি এর মধ্যে এক প্রকার উপাদান আছে যা আমাদের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করতে খুবই সাহায্য করে থাকে । এই উপাদানটি গ্রিন টি এর মধ্যে থাকে আর আপনি যদি নিজেকে অবসাদমুক্ত রাখতে চান তাহলে গ্রিনটা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
- ফ্যাট বার্ন করে
গ্রিন টি আমাদের শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ ও চর্বি কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । যারা অতিরিক্ত মেদ ও চর্বি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা অবশ্যই গ্রিন টি পানের অভ্যাস করুন । গ্রিন টি আমাদের অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে খুবই উপকার করে থাকে । যা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে গ্রিন টি বেশ জনপ্রিয়।
- ত্বক ভালো রাখে
নিয়মিত গ্রিন টি পানের অভ্যাস আমাদের স্কিনকে সতেজ রাখে। গ্রিন টি এর মধ্যে ভিটামিন ই থাকায় ত্বককে সঠিক পরিমাণের পুষ্টি ও হাইড্রেট ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ফলে আমাদের ত্বক অনেক প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল দেখায় ।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
এক গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে সকল মানুষেরা নিয়মিত গ্রিন টি পানের অভ্যাস রাখেন তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে । ডায়াবেটিস রোগীরাও পান করে ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন ।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার পাশাপাশি গ্রিন টি আমাদের আরো অনেক উপকার করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে গ্রিন টি এর ভূমিকা ব্যাপক ।
গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময়
গ্রিন টি খেলেই যে ওজন কমবে বিষয়টা আসলে এরকম না ।এটি আমাদের অনেকেরই ভ্রান্ত একটি ধারণা । আসলে গ্রিন টির খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে খেলে তবেই না আমরা এর প্রকৃত ভাবে উপকৃত হতে পারব । অনেকেই ওজন কমানোর জন্য যত বেশি পারা যায় তত বেশি গ্রিন টি খাই ।
অনেকে তো সকালে খালি পেটেও গ্রিন টি খেয়ে ফেলে কিন্তু এটা মোটেও উচিত না । গ্রিন টি খেয়ে উপকৃত হওয়ার জন্য অবশ্যই আমাদের ভারী খাবারের মাঝখানে গ্রিন টি খেতে হবে । একেবারে খালি পেটে খাওয়া যাবেনা । আবার ভরপেট খেয়ে অনেকেই মনে করে এখন একটা গ্রিন টি খেলে মনে হয় আমার শরীরের চর্বিগুলো বার্ন হয়ে যাবে এই ধারণা টি ভুল ।
আসলে গ্রিন টি খেতে হলে ভারী খাবারের মাঝখানে একঘন্টা বা দুই ঘন্টা বিরতি দিয়ে এক কাপ গ্রিন টি পান করে তারপর ভারী খাবারটি গ্রহণ করলে বেশি উপকার পাওয়া যায় । সকালে হেলদি নাস্তা করার পর তার পর এক কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন অথবা রাতে ডিনার শেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক কাপ গ্রিন টি খেলে উপকার পাওয়া যায় । তবে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খালি পেটে কখনোই গ্রিন টি খাবেন না ।
এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে । গ্রিন টি এর সাথে কখনোই দুধ বা চিনি মেশানো উচিত না তাহলে গ্রিন টি আর প্রকৃত উপাদান আমাদের শরীরে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে না । ওজন কমাতে গ্রিন টি এর উপকারিতা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । নিঃসন্দেহে গ্রিন টি এর উপকারিতা অনেক বেশি ।
গ্রিন টি পানের অপকারিতা
ওজন কমাতে গ্রিন টি বিশেষ ভূমিকা পালন করলেও অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না আর তাই বিনটি এর কিছু অপকারী দিকো রয়েছে । বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন অতিরিক্ত গ্রিন টি পানের ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন গ্যাস্ট্রিক বা পেস্টিক আলসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই গ্রিন টি পান করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে পান করা উচিত।
গ্রিন টি সকালে খালি পেটে কখনোই পান করা উচিত না । এটি আমাদের শরীরে এসিডিটি বা আলসারের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে । অতিরিক্ত গ্রীন টি পানের ফলে শরীরে লোহার পরিমাণ কমে যায় ফলে আমাদের শরীরে রক্তস্বল্পতার মত অসুখ দেখা দিতে পারে তাই অবশ্যই আমাদের সকালে কিছু না খেয়ে গ্রিন টি পান করা যাবে না ।
গ্রিন টির মধ্যে বিশেষ ধরনের ক্যাফেইন থাকে যা আমাদের শরীরে হার্ট রেট ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় । আপনি ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার কথা ভাবছেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই এই সর্তকতা গুলো মেনে পান করতে হবে। তা না হলে আপনাকে বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে ।
লেখক এর মন্তব্য
গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাসটি আসলে শরীরের জন্য অনেক উপকারী ।সুস্বাস্থ্যের জন্য গ্রিন টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। তাই গ্রিন টি খাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে এবং ওজন কমানোর বিষয়গুলো নিয়ে ছিল আজকে আমাদের এই আলোচনা। যদি আমার এই আলোচনাগুলো ভালো লেগে থাকে ,তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url