কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা


কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
কালোজিরার রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন। কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি হয়তো বিস্তারিত খুঁজছেন। তাহলে আজকের এই ব্লকটি আপনাকে মনোযোগ সহকারে করার অনুরোধ রইল।চলুন নিচের পয়েন্টগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।



ভূমিকা

আমাদের শরীরের জন্য কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা এতটাই বেশি যে আমরা হয়তো অনেকেই সে সম্পর্কে জানিনা। যদি জানতাম তাহলে সবাই নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করতাম। কালোজিরা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম সোডিয়াম আইরন ফাইবার এবং আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে । এ সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হল।

কালোজিরা কি

কালোজিরা দেখতে ছোট দানাদার কালো রঙের তিলের মত এক জাতীয় ফল । কালোজিরা সাধারণত মসলার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় । আমরা রান্নার কাজে কালোজিরা ব্যবহার করে থাকি । কালোজিরা নিচে হালকা সাদা বর্ণের হয়ে থাকে এবং এর ফুল ও বীজ কালো রঙের হয়ে থাকে এটি একটি মৌসুমী গাছ । কালোজিরা গাছে একবার ফুল ও একবার ফল হয় । কালোজিরা মসলা হিসেবে ব্যবহার হলেও আমরা এটিকে অনেক রকম ভাবেই খেতে পারি ,বা ব্যবহার করে থাকি। কালোজিরা ভর্তা কিংবা গুড়া করে কিংবা তেল হিসেবে বিভিন্নভাবেই খাওয়া যায়।

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা

ঔষধি গুনাগুনের পাশাপাশি কালোজিরা রয়েছে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা । নিচের পয়েন্ট গুলোর মাধ্যমে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা আরো ভালোমতো জানতে পারবো ।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
যারা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগেন তাদের জন্য রয়েছে কালোজিরার বিশেষ গুণ তারা নিয়মিত কালোজিরা সেবনের মাধ্যমে উচ্চতা রক্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতে পারেন কালোজিরার মধ্যে যে উপাদান গুলো রয়েছে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম কালোজিরা গরম চা কিংবা পানির সাথে মিশিয়ে খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়
  • হারের জয়েন্ট ও ব্যথার জন্য
হাড়ের জয়েন্ট ও ব্যথার জন্য কালো হাড়ের জয়েন্ট ও ব্যথার জন্য কালোজিরা রয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের হার ও মাংসপেশীতে ব্যথা সৃষ্টি হয়। এই ব্যথা দূর করতে কালোজিরার তেল খুবই উপকারী নিয়মিত আপনার ব্যথার জায়গা গুলোতে কালোজিরার তেল মালিশ করলে খুবই আরাম পাওয়া যায় এছাড়াও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি
  • ওজন কমাতে  
  •  কালোজিরাতে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান এই উপাদান আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন ঝরাতে সাহায্য করে বিশেষজ্ঞরা কালোজিরা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।
  • সর্দি কাশি নিরাময়
যারা সর্দি কাশী জনিত সমস্যায় ভুগেন তাদের জন্য কালোজিরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তাররা ডাক্তার ও
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন মধুর সাথে নিয়মিত কালোজিরা সেবন করলে পরিমাণ মতো মধুর সাথে দিনে তিনবার কালোজিরা সেবন করলে খুব সহজেই সর্দি কাশি জনিত সমস্যা থেকে আরাম পাওয়া যায় এছাড়াও কালোজিরা তেল ও তুলসী পাতার রস একসাথে মিশিয়ে সেবন করলেও খুব দ্রুত জ্বর ভালো হয়ে যায়
  • জ্বর নিরাময়
জ্বর থেকে নিরাময় আমাদের শরীর খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে আমরা শক্তি হারিয়ে ফেলি এবং খুব অসুস্থ বোধ করি এই সময় কালোজিরার ভর্তা আমাদের শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে গরম ভাতের সাথে আপনি একটু কালোজিরার ভর্তা খেয়ে দেখবেন আপনার খাবারের মুখের রুচি ফিরে আসবে এবং আপনার শরীরের দুর্বলতা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে ।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে
ত্বকের উজ্জলতা ব্রিধিতে কালজিরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে । মুখের ব্রন ও কালদাগ দূর করতে মধুর সাথে কালজিরা র একটি পেস্ট বানিয়ে ফেলুন ।তারপর নিয়মিত মুখে ব্যবহার করুন ।কিছুদিন এর মধ্যে খুব ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে ।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা র কোন বিকল্প নেই ।শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ালে স্মৃতিশক্তি বাড়ে ও স্বাস্থ্য শক্তি বৃদ্ধি পায় ।
  • মায়েদের জন্য
সাধারনত নতুন মায়েদের জন্য কালজিরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি ।মায়ের বুকের দুধ ব্রিধিতে কালোজিরা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।কালোজিরা র গুড়ো গরম দুধ এর সাথে মিশিয়ে পান করলে বুকের দুধ বেশি হয়।
  • লিভার এর সমস্যা সমাধানে
কালজিরাতে রয়েছে আন্টি অক্সিডেন্ট রাসায়নিক উপাদান যা লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । কালোজিরা আমাদের লিভার ও হার্ডকে সুস্থ রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নিয়মিত কালোজিরা সেবন করলে আমরা লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি ।

আসলে কালো জিরার এতই উপকার রয়েছে যে আমরা বলে শেষ করতে পারবো না কালোজিরা কে মহা ঔষধ বলা হয় মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ বলে আখ্যায়িত করা হয় বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন কালোজিরা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

কালোজিরার পুষ্টিগুণ

কালোজিরা রয়েছে একাধিক পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের নানা বিধর রোগ ব্যাধি দূর করতে কালোজিরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে এতে রয়েছে শতাধিক পুষ্টি উপাদান ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । প্রতি গ্রাম কালোজিরাতে রয়েছে 208 মাইক্রগ্রাম প্রোটিন,

 1.75 মাইক্রগ্রাম ক্যালসিয়াম ১০৫ মাইক্রগ্রা্‌ মাইক্রগ্রাম, ৫ পয়েন্ট ২৬ মিলিগ্রাম ফোসফরাস জিংক ৬০ মাইক প্রোগ্রাম ৫৭ মাইক্রগ্রাম এছাড়াও কালোজিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও খনিজ উপাদান । কালোজিরাতে 21 শতাংশ আমিষ, ৩৮ শতাংশ শর্কর্‌ ও 35% স্নেহ পদার্থ রয়েছে । 

কালোজিরা তেলে রয়েছে ভিটামিন এ ভিটামিন বিটামিন বি টু ভিটামিন সি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ফসফরা্‌ ফসফরাস জিংক ইয়াসিন লোগো কার্বোহাইড্রেট ও আরো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কালোজিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়ু
র্বেদি আয়ুর্বেদিক গুণাগুণ সম্পন্ন উপাদান। কালোজিরাতে রয়েছে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকারী উপাদান । আমাদের বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

উপরে আমরা কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আসুন আমরা এবার কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

কালোজিরা মূলত মসলা হিসেবে তরকারিতে বেশি ব্যবহার করা হয় কিন্তু এছাড়াও কালোজিরার আরো অনেক ব্যবহার বিধি রয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবেই কালোজিরা ব্যবহার করে খেতে পারি কিংবা আমাদের শরীরের জন্য কালোজিরার তেল ব্যবহার করতে পারি।

 কালোজিরা, গুড়া করে একটি বোতলে সংরক্ষণ করে আমরা দীর্ঘদিন এটি ব্যবহার করতে পারি গরম ভাত কিংবা সালাদ বা যে কোন খাবারের সাথে এটি মিশিয়ে খাওয়া যায়। কিছু গোটা কালোজিরা কড়াইয়ের গরম করে নিয়ে তার সাথে মরিচ পেঁয়াজ রসুন একটু গরম করে ভেজে পাটায় ভর্তা করে গরম ভাতের সাথে খেলে মুখে খাবারের রুচি বাড়ে ।

 যে কোন খাবারের মধ্যে কালোজিরা ছিটিয়ে খাওয়া যায় সালাদ কিংবা বিভিন্ন ফ্রুট আইটেমের সাথে কালোজিরা খাওয়া যায়। রুটি কিংবা বেকারি বিস্কিট বানানোর সময় কিছু কালোজিরা ছিটিয়ে ব্যবহার করা যায় এটি স্বাদকে দুটি বা বিস্কিটের স্বাদকে আরো বাড়িয়ে তোলে। 

এছাড়া কালোজিরা মধুর সাথে মিশিয়ে কিংবা গরম দুধের সাথে মিশিয়েও পান করা যায় । কালোজিরা এমন একটি উপাদান যা আপনি যে কোন খাবারের সাথে কাঁচা মিশিয়ে খেতে পারবেন ।

প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত

প্রতিদিনকালোজিরা খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী । নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । তবে কালোজিরা খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে । যারা প্রথম অবস্থায় খাওয়া শুরু করেছেন তাদের জন্য খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া মোটেও ভালো হবে না ।

 প্রতিদিন প্রতিদিন এক চিমটি কালোজিরা এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে সকাল বেলা খাওয়া উচিত । তবে যাদের হজম শক্তি বেশি তারা পরিমাণে ২ গ্লাসও খেতে পারেন দুই চিমটি চামচ দুই গ্লাস খেতে পারেন কোলেস্টেরলের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন গ্লাস কালোজিরা দুধের সাথে মিশিয়ে পান করলে পান করা যায় । 

রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত এক গ্লাস পানির সাথে কালোজিরা মিশিয়ে ব্যান করলে যৌন সমস্যা দূর হয় তবে মাত্রাতিরিক্ত পান করলে শরীরের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই প্রথম। বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো ।

কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা


কালোজিরার উপকারিতা থাকার পাশাপাশি কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে ।প্রতিটা জিনিসেরই কিছু ভালো ও কিছু খারাপ দিক থাকে কালোজিরারও অতিমাত্রায় সেবন করলে আমাদের শরীরে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই মাত্র অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না।

 অতিরিক্ত কালোজিরা সেবন করলে আমাদের রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে যার ফলে আমাদের নানাবিধ শারীরিক ঝুঁকি দেখা দিতে পারে । কালোজিরা তেল প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যবহার করলে আমাদের শরীরে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে এছাড়া স্কিন খুলে লালও হতে পারে তাই অতিরিক্ত ব্যবহার না করাই ভালো ।

 অতিরিক্ত কালোজিরা সেবনের ফলে আমাদের শরীরে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে । তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কালোজিরা পরিমাণ মতো সেবন করবেন ।

শেষ কথা

আমরা আজকে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম । কালোজিরা কে সর্ব রোগের মহা ঔষধ বলা হয় আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন মৃত্যু ব্যতীত কালোজিরা সকল রোগের মহা ঔষধ । তাই আমরা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত কালোজিরার সঠিক ব্যবহার করব ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url