প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা


ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার ও সহজলভ্য । আমাদের জন্য ডিম খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি । আমাদের শরীরের পুষ্টি

ও প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে ডিম বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । যারা ডিম পছন্দ করেন কিন্তু  ডিম খাওয়ার নিয়ম ও ডিমের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না তাদের জন্য আমার আজকের এই আর্টিকেলটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল ।

ভূমিকা

আমাদের প্রতিদিন শরীরের জন্য অনেক বেশি পুষ্টি ও প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে । শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ডিম অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান । প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে । ডিমের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আমাদের হারকে মজবুত করে ও শক্তি যোগাতে সাহায্য করে 

ডিম খাওয়ার উপকারিতা

পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান গুলোর মধ্যে ডিম অন্যতম । আমাদের শরীরে শক্তি যোগায় ও শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । বিশেষজ্ঞরা আমাদের প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ডিম অবশ্যই রাখতে বলেছেন । ডিম খাওয়ার উপকারিতা গুলো আসুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক ।

  • হাড় মজবুত রাখে

ডিমের মধ্যে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় হাড়ের গঠনে ডিম বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । যারা হাটু ব্যথা বা বিভিন্ন ব্যথাজনিত সমস্যায় ভোগেন তারা তাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন একটি করে ডিম সেদ্ধ রাখতে পারেন । ডিমের পুষ্টিগুণ হাড়কে শক্তিশালী ও মজবুত করে ।
  • দেহে শক্তি যোগায়
আমরা সারাদিন নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকি । আর এই কাজ করার জন্য আমাদের প্রচুর শক্তির প্রয়োজন পড়ে । প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে আমরা যদি একটি করে ডিম খাই তাহলে আমাদের সারা দিনের শক্তির চাহিদা পূরণ করবে ।পুষ্টিবিদরা এই জন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্য একটি করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে
আমাদের শরীরে অনেক কোলেস্টরেল থাকে এই কোলেস্টরে মাত্রা যদি আমাদের বেড়ে যায় তাহলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতি হতে পারে । ডিমের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে ।
  • দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে
শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে ডিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান । ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম । ডিমের প্রোটিন আমাদের মানসিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • এনার্জি বৃদ্ধিতে
ডিমের মধ্যকার ভিটামিন থেকে মূলত আমরা শক্তি পেয়ে থাকি । ডিম এনার্জির খুবই ভালো একটি উৎস । ভিটামিন বি এর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি খাদ্যকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করে । আমরা যদি আমাদের সকালের নাস্তায় একটি করে ডিম খায় তাহলে সারাদিন আমারা সারাদিন আমরা একটিভ ও ক্লান্তিহীন অনুভব করতে পারি ।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে
ডিমের মধ্যে যে পুষ্টিগুণ থাকে তা আমাদের শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। আমরা আমাদের প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা গুলো আসলে বলে শেষ করা যাবে না । ডিম খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে ।
  • স্টোকের ঝুঁকি কমায়
ডিমের মধ্যে ওমেগা থ্রি

ফ্যাটি অ্যাসিড বিদ্যমান থাকে । এই ওমেগা ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
  • ওজন কমাতে
আমরা যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগি যারা নিয়মিত ডায়েটে আছি তাদের জন্য ডিম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হতে পারে ওজন কমাতে । ডিম খওয়ার নিয়ম মেনে  প্রতিদিন একটি সেদ্ধ ডিম খেলে ওজন কমতে সাহায্য করে ।

ডিমের পুষ্টিগুণ

ডিম অনেক সহজলভ্য ও পুষ্টিকর একটি খাদ্য উপাদান ।ডিমের দাম কম হওয়ায় সবারই প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খাওয়া উচিত । ডিমের মধ্যে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা জানলে জানলে আপনি হয়তো অবাক হয়ে যাবেন । 

একটি ডিমে রয়েছে ১৪৩ ক্যালোরির মতো কার্বোহাইড্রেট ,প্রোটিন ১২.৫্ গ্রাম ,১২৮ গ্রাম পটাশিয়াম ,1038 মিলিগ্রাম জিংক ,১.২৯ মিলিগ্রাম এছাড়াও ভিটামিন ডি ,এ , বি , ও প্রোটিনের অনেক বড় উৎস রয়েছে । ডিমকে পুষ্টি উপাদানের খনিও বলা হয় । ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ,ক্যালসিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম ,কোলিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ।

 ডিমের দুটি অংশ রয়েছে একটি সাদা ও একটি লাল অংশ লাল অংশকে বলা হয় কুসুম । ডিমের সাদা অংশের মধ্যে ৮৮ পার্সেন্ট পানি থাকে প্রোটিন প্রোটিন বা আমিষ থাকে ১১ বি 0.2% এবং খনিজ পদার্থ০.৮% ।
ডিমের হলুদ অংশের মধ্যে অর্থাৎ কুসুমের মধ্যে থাকে ৪৮.০% পানি ১৭.৫% প্রোটিন বা আমি ও 32.5% চর্বি এবং ২ পার্সেন্ট খনিজ পদার্থ থাকে ।

 ডিমের কুসুম অংশ খুবই নরম ও তরল হওয়ায় সহজে হজম হয়ে যায় কুসুমের মধ্যে আরও রয়েছে ক্যালসিয়াম ফসফরাস লৌহ ওখানে উপাদান ডিম যেভাবে  রান্না হোক না কেন ডিমের পুষ্টিগুণ ও বিকৃত অবস্থায় থাকে । তবে ডিম অনেক পুষ্টিকর হলেও ডিমের মধ্যে ভিটামিন সি থাকে না অন্যান্য ভিটামিন বিদ্যমান থাকে

ডিম খাওয়ার নিয়ম

ডিম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য উপাদান । ডিম পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল । ছোট বড় আমরা সবাই ডিম খেতে খুবই পছন্দ করি । ডিম খাওয়ার বিশেষ তেমন কোন নিয়ম নেই যার যেভাবে পছন্দ সে সেভাবে নিজের মত রেসিপি করে ডিম খেতে পারেন।

 তবে বেশি তেল বেশি মসলা দিয়ে ডিম পোচ না করে সামান্য তেলে ডিম পোজ করে খেলে শরীরের জন্য বেশি উপকারে আসে । ডিম সেদ্ধ করে খেলে শরীরের জন্য আরও বেশি ভালো হয় । অনেকে হাফ বয়েল করে ডিম খেতে পছন্দ করেন । তবে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারা ডিমের কুসুম বাদে ডিমের সাদা অংশটা খেতে পারেন । 

 ডিম দিয়ে নানা রকমের রেসিপি তৈরি করেও খাওয়া যায় যেমন কেক, পুডিং অনেক মজাদার খাবার , বিশেষ করে বাচ্চারা এই জাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করে থাকে । তবে যেভাবে খান কেন সঠিক নিয়ম বজায় রেখে ডিম খেলে তবে আমাদের শরীরের জন্য উপকারে আসবে । ডিমকে সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে ।

ওজন কমাতে ডিম কিভাবে খাবেন

ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার ।আমরা ওজন কমানোর জন্য কত কিছুই না ফলো করি কত কিছুই না খাই কিন্তু আমাদের ওজন কমাতে ডিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে থাকে ।আমরা হয়তো সঠিক নিয়ম ফলো করলে ডিম খেয়েও ওজন কমাতে পারি ।ডিম খাওয়ার নিয়ম  মেনে চললে ওজন কমান সম্ভব ।
ডিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ডিম খেলে দীর্ঘক্ষন পেট ভারী থাকে তাই আমাদের খুদাও কম লাগে এবং আমরা কাজেও অনেক শক্তি পাই ।

 তাই আমাদের ওজন কমাতে ডিম খুবই উপকারী । ডিমের সাথে ওটমিল মিশিয়ে খেতে পারেন এটি আমাদের শরীরের বাড়তি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ডিম খেলে প্রোটিন বাড়বে হলে আমাদের শরীর সুস্থ ও সবল থাকে । এছাড়াও দিনকে হাফ বয়েল করে একটু নুন ছিটিয়ে খেয়ে নিতে পারেন এটা আমাদের শরীরে দীর্ঘক্ষণ শক্তি যোগাবে । ডিমের ঝরাতেও সাহায্য করে ।


সেদ্ধ ডিম খেলে কি গ্যাস হয়

ডিম অনেক সহজ পাত্র একটি খাবার এটি খুব দ্রুতই হজম হয়ে যায় । তবে যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের জন্য একটু সমস্যা হলেও হতে পারে । ডিম ছোট বাচ্চা কিংবা বড় বা বয়স্ক সবাই খুব সহজে এটি খেতে পারে ডিম খেলে কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। 

 এবং অনেকেরই ভুল ধারণা ভুল ধারণা যে সেদ্ধ ডিম খেলে গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে । আসলে ডাক্তারের মতে এই কথার কোন ভিত্তি নেই । তবে যারা ক্রনিক গ্যাস ট্রাইট্রিস রয়েছে তাদের হজমজনিত সমস্যার কারণে একটু সমস্যা হলেও হতে পারে । কারণ এই মানুষের হজম ক্ষমতা এমনি অনেক দুর্বল থাকে । 

তবে সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন অবশ্যই ডিম খাওয়ার উপকারিতা গুলো ভুলে গেলে চলবে না । ডিম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । তাই আমাদের অবশ্যই সবার প্রতিদিন অন্তত একটি করে হলেও ডিম খাওয়া উচিত ।

ডিম খাওয়ার অপকারিতা

আসলে সব কিছুরই ভালো এবং খারাপ দিক থাকে । যদিও ডিম পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি খাবার তারপরও এর কিছু খারাপ দিক রয়েছে । যেমন বেশি মাত্রায় ডিম খেলে আমাদের শরীরের ওজন কমা বাদ দিয়ে ওজন আরো বেড়ে যাবে । তাই আমাদের অবশ্যই সঠিক মাত্রায় নিয়ম মেনে ডিম খেতে হবে । ডিম বেশি খেলে কোলেস্টরেলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে ।

 এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অবশ্যই ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে ডিমের সাদা অংশটুকু খেতে হবে । আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দিন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে তবে ডিমের উপকারী দিকগুলো বিবেচনা করে সঠিক নিয়ম মেনে ডিম খেলে তবে আমরা উপকৃত হতে পারব ।সঠিক ভাবে ডিম খাওয়ার নিয়ম মানলে কোন সমস্যা হবে নাহ ।

শেষ কথা

সবশেষে বলতে পারি ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার ও সহজলভ্য খাবার আমাদের সকলেরই উচিত আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম রাখা । ডিমের উপকারিতা এবং অপকারিতা দিকগুলো আজকে আলোচনা করা হলো এই আর্টিকেলটিতে । আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url