বারোমাস মুলা চাষ করার সহজ পদ্ধতি
বারোমাস মুলা চাষ করার কয়েকটি সহজ ও আধুনিক উপাই সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আপনি হয়ত মুলা চাষ করবেন ভাবছেন কিন্তু কিভাবে কি করতে হ্ত আপনি সেই বিষয় নিয়ে চিন্তিত ।চিন্তার কোন কারন নেই আজকে আমরা মুলা চাষ এর আধুনিক ও সহজ উপাই গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলচনা করব সম্পূর্ণ বিষয় টি ভালমত বুঝার জন্য আর্টিকেল টি মনোযোগ দিয়ে পরু
মুলা চাষ করার সঠিক মাস ও উপযুক্ত সময় এবং আধুনিক কয়েকটি পধতি ও এছাড়াও আর ও গুরুত্ব পূর্ণ অনেক তথ্য নিয়ে আলচনা করা আসে সেগুলো মনোযোগ দিয়ে পরবেন ।
ভুমিকা
মুলা একটি শীত কালীন সবজি হলেও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন এর ফলে এখন আমরা বারোমাস এই এই সবজি চাষ করতে পারি । হাইব্রিড জাতের বীজ ও আধুনিক চাষ পধত্তি র ফলে অল্প সময় এ মুলা উথপাদন সম্ভব হচ্ছে আসুন এই সম্পকে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক নিচের পয়েন্ট গুলর মাধ্যমে।
মুলা কি
মুলা একটি কন্দাল জাতীয় ফসল ,এটি সালাদ ভাজি এবং তরকারি হিসাবে ও রান্না করে খওয়া যাই । মুলার পাতা শাক হিসাবেও খুব এ মজাদার একটি খাবার । মূলাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন তথা ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে ।এটি অনেক পুষ্টি গুণ সম্পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এটি খেতে অপছন্দ করে।
মুলার পুষ্টিগুণ
মুলা দেখতে সাদা ও লাল চিকন বা মাঝারি মোটা লম্বা আক্রিতি হয়ে থাকে । মুলা তে অনেক প্রছুর ভিটামিন ও ক্যারোটিন ও লোহ রয়েছে ।প্রতি ১০০ গ্রাম মুলাতে রয়েছে
শক্তি > ৬৬ জুল
শর্করা > ৩.৪ গ্রাম
চিনি > ১.৮৬ গ্রাম
প্রটিন > ০.৬৮ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম >১০ মিগ্রা
স্নেহ পদার্থ >০.১ গ্রাম
ফসফরাস >২০ মিগ্রা
পটাশিয়াম>২৩৩ মিগ্রা
জিংক > ০.২৮ মিগ্রা
দিন দিন আমাদের দেশে মুলা চাষ এর চাহিদা বাড়ছে ।
মুলা চাষ এর জমি ও মাটি
মুলা বীজ সরাসরি জমিতে বপন করা হয় । মুলা চাষের জমি উপর্যুপরি চাষ দিয়ে মাটিকে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।সাধারনত বেলে দো আশ মাটিতে মুলা ভাল হয়। মূলা চাষের জন্য বেলে দো-আশ মাটি উপযুক্ত।
এছাড়া পলি দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিসহ সব ধরনের মাটিতে পরিমিত সার ও অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করে লাভজনকভাবে মুলা চাষ করা যায়। ছাই ও জৈব সার বেশী ব্যবহারে মুলার উৎপাদন ভাল হয় । আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ মুলার বীজ বপন করা হয়।
ছাদে মুলা চাষ করবেন যেভাবে
বর্তমানে মানুষ এর জাইগা কম থাকাই মানুষ ছাদ বাগান এর দিকে বেশি আগ্রহি হচ্ছে। সঠিক নিয়ম মেনে ছাদ এ ও অনেক কিছু চাষ করা সম্ভব ।তেমনি অন্যান্য সব্জির মত মুলা ও অনেক সহজ উপাই এ ছাদ ফলান সম্ভব ।
ছাদে মুলা চাষ করার জন্য বেড তৈরি করলে চাষে সুবিধা হবে। বেড তৈরি করতে হবে ইট দিয়ে। তবে বেড না থাকলে সিমেন্টের তৈরি বড় টব বা ড্রামে ও মুলা চাষ করা যাবে।
মুলা চাষে টবের আকার যথাযথ হবে হবে। টবে যেন ১৫-২০ কেজি মাটি ধরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি আগে তৈরি করতে হবে। মাটির তৈরির জন্য দোআঁশ মাটি ৫০ ভাগ, বালি ৫ ভাগ, গোবর সার ৪০ ভাগ এবং ৫ ভাগ ছাই মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। তারপর মাটিতে মুলার বীজ গুলো ভাল মত নির্দিষ্ট বেডে বা বস্তায় সতর্ক ভাবে পুতে দিতে হবে।
এবং সরাসরি সূর্যের আলো থেকে ছাড়া গাছ গুলো একটু দূরে সরিয়ে রাখতে হবে । ছারা গাছ গুলো বড় হওয়ার পর আলোর কাছে আবার সরিয়ে আনতে হবে । মাঝে মাঝে পানি ও সার দিতে হবে এবং আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে ।আভাবে সঠিক নিয়ম এ পরিচর্যা করলে খুব সহজেই মুলা র ভাল ফলন পাওয়া যাবে ।
গ্রীষ্মকালীন মুলা চাষ পদ্ধতি
এক সময় মুলা শুধু শীত কালেই পাওয়া যেত ।কিন্তু কৃষি উন্নয়ন এর ফলে মুলা এখন বার মাস এ চাষ করা হয় ,আগাম সময় মুলা চাষ করে কৃষক অনেক লাভবান হচ্ছে । বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকাই বিক্রেতা রা ভাল দাম পাচ্ছে ।
আশ্বিন- কার্তিক (মধ্য সেপ্টেম্বর - মধ্য নভেম্বর) উপযুক্ত সময়
।মুলার বীজ বপন এর পূর্বে চাষের জমি ভাল মত চাষ দিয়ে ঝুরঝুরা করে নিতে হবে । মুলা যেহেতু সরাসরি মাটি তে বপন করা হয় তাই মাটি তৈরি র উপর মুলার ভাল ফলন অনেক তা নির্ভর করে।
* মুলা চাষের জন্য বেলে দো আশ মাটি হলে ভাল হয় । তাছাড়া এঁটেল ও পলি দো আঁশ মাটি তে সার প্রয়গ করে ভাল মুলার ফলন পাওয়া যায়।
* জমির মাটি ভাল মত রেডি হয়ে গেলে জমিতে বেড তৈরি করতে হবে ।বেডের উভয় পাশে লম্বা লম্বি দুটি লাইন টানতে হবে ।লাইন দুটি ১থেকে ২ সে .মি গভীর হতে হবে ।
*লাইন এ ৩০ সেমি দূরে দূরে ২ ৩ টি বীজ বোনা যেতে হবে ।
*বীজ বপন এর পর বীজ গুলো মাটি দিয়ে ভাল মত ঢেকে দিতে হবে ।
*দুই বেডের মাঝে ৩০ সেমি ও ১৫ সেমি গভীর নালা থাকতে হবে ।
*বীজ বপনের পরপর একবার সেচ দিতে পারলে ভাল হয় ।
* চারা গজানর ৭থেকে ১০ দিন পর অতিরিক্ত আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে ।
মুলা ক্ষেতে পর্যাপ্ত আলো ও পানির বাবস্থা মুলার ভাল ফলন এ সহায়ক ।অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে মুলার ক্ষেত থেকে তা দ্রুত অপসারন এর বাবস্থা করতে হবে ।
মুলার জমিতে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
বাংলাদেশে একসময় জাপানের বিখ্যাত তাসাকি সান জাতের উচ্চফলনশীল মূলার মাধ্যমে আবাদ শুরু হলেও এখন মূলার প্রায় ২৫টি জাত চাষ হচ্ছে। আসছে নিত্য নতুন স্বল্প জীবনকালের অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাত। সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে পারলে এই সবজির ভালো ফলন পাওয়া যায়। মুলা ভালো ফলনের জন্য প্রতি হেক্টর জমির জন্য ৩৭৫ কেজি ইউরিয়া , টিএসপি ২২৫ কেজি,ত্ব
এমওপি ২২৫ কেজি, জিপসাম ১০০ কেজি এবং বোরাক্স ১০-১৫ কেজি প্রয়োজন হবে।
শেষ চাষের সময় টিএসপি, জিপসাম, বোরাক্স সবটুকু এবং ইউরিয়া ও এমওপি সারের অর্ধেক জমিতে দিতে হবে। সার সবসময় সকাল বা বিকাল এ দিতে হবে । এবং সার প্রয়োগ এর পর পর এ সেচ দিতে হবে ।ভাল ফলন এর জন্য অবশ্যয় সঠিক মাত্রাই সার প্রয়োগ করতে হবে ।
মুলার ক্ষেত এর পরিচর্যা
মুলা রবি শস্য হলেও এখন এই সব্জি সারা মাস এ বাজারে পাওয়া যাই । সঠিক নিয়ম এ ফসল এর পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা পালন করে ভাল ফলন পেতে । মুলা খুব এ অল্প সময় এ উৎপাদন করা যাই । মুলা ক্ষেত এ নিয়মিত সেচ দেওয়া খুব এ জরুরি ।ক্ষেত এ রস এর অভাব হলে
গাছ মারা যেতে পারে ।
তাই প্রতি ১০ থেকে ১২ দিন পর পর অন্তত সেচ দেওয়া উত্তম ।নিয়মিত ক্ষেত এর আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে ।ক্ষেত এর মাটি শক্ত হয়ে গেলে নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুর ঝুরা করে দিতে হবে । মুলার জমিতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস এর বাবস্থা থাকে সেই দিক এ খেয়াল রাখতে হবে। আবার অতি বৃষ্টি র কারনে জমিতে পানি নিস্কাশনের বাবস্থা ও থাকতে হবে। মুলা ক্ষেত এর পকা মাকর ও দমন এর জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
সাধারনত মুলা লাগানোর ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর এ উত্তোলন করে বাজারজাত করা যাই ।এই সময় মুলার গড় ওজন ৫০০ থেকে ১ কেজি হয়ে থাকে ।
লেখকের মন্তব্য
কৃষি নির্ভর আমাদের এই বাংলাদেশ ।আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত জাতের বীজ এবং সঠিক পধতি অনুসরন করে এখন সারা বছরই মুলা উথপাদন হচ্ছে ।আপনারাও উপরে উল্লেখিত নিয়ম অনুসরন করে সারা বছরই মুলা চাষ করতে পারেন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url